জনমত নিউজ : “নতুনের কেতন ওরে কাল-বোশেখীর ঝড় / তোরা সব জয়ধ্বনী কর/ ‘পুরাতনকে কাঁপিয়ে এসেছে নতুন, এখন সময় নতুনের, জরা, জীর্ণপাতার মর্মর শব্দ সবটুকু ছুঁড়ে ফেলে নতুনেই মুক্তি।
একটি অসম্ভব সুন্দর আগামীর পথে এগিয়ে চলার প্রত্যয়ে আজ উচ্ছ্বসিত চারদিক।” জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই জয়ধ্বনীর মাধ্যমে চৈত্রের রৌদ্র দিনের পরিসমাপ্তি শেষে বাঙালির জীবনে এসেছে এক নতুন দিন, নতুন বারতা।
চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৫ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হলো নতুন বছর ১৪২৬। পুরোনো বছরকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করেছে বাঙালি জাতি।
রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটে সূর্যকে আহ্বানের মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠেছে দেশ। রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে রাগ ললিতের মধ্য দিয়ে সূর্যকে আহ্বান জানানো হয়।
বাঙালির প্রত্যাশা নতুন দিনের সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে শুরু হয় বাংলা সন গণনা। কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য এই কাজ করা হতো। হিজরি চন্দ্রাসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
প্রথমদিকে বাংলা সনের পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে ১৫৫৬ সালে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পয়লা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশ।
কাল বর্ষবরণের এ উৎসব আমেজে মুখরিত থাকবে বাংলার চারদিক। গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে বাঙালি মিলিত হবে তার সর্বজনীন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে।
দেশের পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, আর উৎসব মুখরতার বিহ্বলতা।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা শুরু করেছে।
বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ ১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করেছে। পয়লা বৈশাখের সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বাংলা একাডেমি সকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বইমেলাসহ বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে একাডেমি চত্বরে।
জাতীয় প্রেসক্লাব বর্ষবরণে তাদের সদস্য ও পরিবারবর্গের জন্য সকাল থেকেই খৈ, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা ও বাঙালি খাবারের আয়োজন করেছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিও অনুরূপ আয়োজন করেছে তাদের সদস্য ও পরিবারের সদস্যদের জন্য।